প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফাও –এর ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে ৭৫ টাকার স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি উদ্ভাবিত ১৭ রকমের বায়োফর্টিফায়েড বীজ তিনি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন।
এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্ব জুড়ে যাঁরা অপুষ্টি দূর করার জন্য কাজ করে চলেছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অপুষ্টির বিরুদ্ধে আন্দোলনের আমাদের মূল ভিত্তি হলেন, আমাদের কৃষক বন্ধু – আমাদের অন্নদাতা, আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা, আমাদের অঙ্গনওয়াড়ি আশা কর্মীরা। এরা ভারতের শস্য ভান্ডারকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ভরিয়ে তুলেছেন। তাঁরা সরকারকে সমাজের দরিদ্রতম মানুষের কাছে পৌঁছতেও সাহায্য করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, এই সব উদ্যোগের মধ্য দিয়ে করোনার এই সঙ্কটকালেও ভারত অপুষ্টির বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিগত বছরগুলিতে ফাও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এবং ভারত সহ সারা পৃথিবী থেকে অনাহার দূর করতে সাহায্য করেছে। ১৩০ কোটিরও বেশি ভারতবাসী ফাওএর পুষ্টি সংক্রান্ত উদ্যোগকে সম্মান জানায়। তিনি বলেছেন, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তি ফাও-এর জন্য একটি বড় সাফল্য। ফাও-এর সঙ্গে ভারতের এই অংশীদারিত্ব ঐতিহাসিক, আর তাই, ভারত এ বিষয়ে অত্যন্ত খুশি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডঃ বিনয় রঞ্জন সেন যখন ফাওএর মহানির্দেশক ছিলেন, তখন তাঁর নেতৃত্বে ফাও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সূচনা করেছিল। মহামারী ও অনাহারের যন্ত্রণা ডঃ সেন খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। আর তাই তাঁর অভিজ্ঞতা সারা বিশ্বের জন্য ফলপ্রসূ হয়েছিল। ফাও বিগত এক দশক ধরে বিভিন্ন সঙ্কটের মধ্যেও ভারতে অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কম বয়সে গর্ভবতী হওয়া, শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া, যথাযথ তথ্য না পাওয়া, পানীয় জলের সঙ্কট, পরিচ্ছন্নতার সমস্যার জন্যই আমরা কাঙ্খিত ফল পাচ্ছিলাম না।
শ্রী মোদী বলেছেন, ২০১৪ সালের পর থেকে অতীতের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে দেশে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের সর্বাঙ্গীণ উদ্যোগের ফলে বহুপাক্ষিক কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। অপুষ্টি দূর করতে জাতীয় পুষ্টি মিশন (পোষণ অভিযান), স্বচ্ছ ভারত অভিযানের আওতায় শৌচাগার নির্মাণ, মিশন রেনবো, জল জীবন মিশন, স্বল্প মূল্যের স্যানিটেশন প্যাড বিতরণের মতো নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, মেয়েরা আরও বেশি সংখ্যায় স্কুলে ভর্তি হচ্ছে এবং এই অনুপাত ছেলেদের চেয়েও এখন বেশি। তিনি বলেছেন, দানাশস্যের ব্যবহার বাড়ানো এবং প্রোটিন, লোহা, দস্তা ইত্যাদি সমৃদ্ধ শস্য উৎপাদনের মাধ্যমে অপুষ্টি দূর করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে।
২০২৩ সালকে আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ হিসাবে ঘোষণা করার ভারতের প্রস্তাবকে ফাও সমর্থন জানানোয় প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এর ফলে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে উৎসাহ যেমন বাড়বে, পাশাপাশি, ক্ষুদ্র চাষীরাও উপকৃত হবেন। সাধারণত, যেসব জায়গায় জলের সমস্যা থাকে সেখানে অনুর্বর জমিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীরা দানাশস্য উৎপাদন করেন। ফাও-এর এই সিদ্ধান্তে শুরু ভারত নয়, সারা বিশ্ব উপকৃত হবে।
শ্রী মোদী বলেছেন, সাধারণত, যেসব খাদ্যশস্য আমরা খাই, সেগুলিতে পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি থাকে। এই ঘাটতি দূর করার জন্য বায়োফর্টিফায়েড বীজ উদ্ভাবন করা হয়েছে। আজ আঞ্চলিক এবং প্রথাগত শস্যের ১৭ রকমের বায়োফর্টিফায়েড বীজ তিনি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন – এর মধ্যে গম ও ধানের বীজও আছে। কৃষকরা খুব শীঘ্রই এগুলি পাবেন। এর ফলে, পুষ্টি অভিযান আরো শক্তিশালী হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা মহামারীর সময় সারা বিশ্ব ভারতে অনাহার ও অপুষ্টির বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। কিন্তু, গত ৭-৮ মাসে ভারত ৮০ কোটি দরিদ্র মানুষের কাছে দেড় কোটি টাকার খাদ্যশস্য বিনামূল্যে তুলে দিয়েছেন। আর এভাবেই অনাহার ও পুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। খাদ্য সুরক্ষার বিষয়ে ভারতের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রেশন ব্যবস্থায় চাল অথবা গমের সঙ্গে মুশুর ডালকে যুক্ত করা হয়েছে।
শ্রী মোদী বলেছেন, ২০১৪ সাল পর্যন্ত মাত্র ১১টি রাজ্যে খাদ্য সুরক্ষা আইন বলবৎ ছিল। তারপর, তা সফলভাবে গোটা দেশে কার্যকর হয়েছে। করোনার জন্য সারা বিশ্ব যখন সঙ্কটের মধ্যে ছিল, ভারতীয় কৃষকরা সেই সময়ে রেকর্ড পরিমাণে খাদ্যশস্য উৎপাদন করেছেন। গম, ধান, ডালশস্যের মতো ফসলের রেকর্ড পরিমাণ সংগ্রহ হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে খাদ্য নিরাপত্তার প্রতি ভারতের অঙ্গীকারের প্রতিফলন নিয়মিতভাবে নানারকম সংস্কারের বাস্তবায়ন বলে তিনি জানিয়েছেন। কৃষকদের আয় বৃদ্ধির জন্য কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কার নেওয়া হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বাজার কমিটি বা এপিএমসি আইন সংশোধনের মূল্য লক্ষ্যই হ’ল কৃষি বাজারকে আরও প্রতিযোগিতামুখী করে তোলা। কৃষকরা যাতে তাঁদের কৃষি কাজের ব্যয়ের দেড় গুণ অর্থ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হিসাবে পান, তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে সরকারের মাধ্যমে খাদ্যশস্য সংগ্রহ দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খুব সঙ্গত কারণেই ভবিষ্যতে এই উদ্যোগগুলি বজায় থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ক্ষুদ্র কৃষকদের শক্তিশালী করতে কৃষি পণ্য উৎপাদন সংগঠন দেশে গড়ে তোলা হচ্ছে। ভারতে খাদ্যশস্যের অপচয় একটি বড় সমস্যা। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য অত্যাবশ্যক পণ্য আইনের সংশোধন করা হয়েছে। এখন গ্রামে ভালো পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি আরও সুযোগ পাবে।
এপিএমসি আইন সংশোধনের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, কৃষক যখন কোনও বেসরকারি সংস্থা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবে, তখন বীজ বোনার আগেই উৎপাদিত ফসলের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এর ফলে, মূল্যের ওঠানামা সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে এবং কৃষি কাজে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ জন্মাবে। কৃষকরা এর ফলে নানারকমের সুযোগ পাবেন। কৃষকদের আইনি সুরক্ষা কবচও নিশ্চিত হবে। কৃষক যদি কোনও কারণে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চান, তা হলে তাঁকে কোনও জরিমানা দিতে হবে না। কিন্তু কোনও প্রতিষ্ঠান যদি কৃষকের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করে, সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা দিতে হবে। এই চুক্তির ফলে সবরকমের সুফল কৃষি ক্ষেত্রে আসবে এবং কৃষকরা কোনও রকমের সমস্যায় পড়বেন না। এই সংস্কারগুলির মধ্য দিয়ে কৃষকদের সবরকমের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যখন ভারতীয় কৃষকদের রোজগার বাড়বে, তখন তাঁরা শক্তিশালী হবেন এবং অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইও মজবুত হবে। এই উদ্যোগে ভারত এবং ফাও একযোগে কাজ করবে এবংএই কাজে সমন্বয় বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।