প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী স্বামীত্ব প্রকল্পের আওতায় সম্পত্তি সংক্রান্ত কার্ড বন্টন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সূচনা করেছেন। তিনি এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মত-বিনিময়ও করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী স্বামীত্ব প্রকল্পে যাঁরা তাদের বাড়ির সম্পত্তি সংক্রান্ত কার্ড পেয়েছেন তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং বলেছেন, এখন থেকে এইসব সুবিধাভোগীদের বাড়ি সংক্রান্ত আইনী নথি এবং বাড়ির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হল। এই প্রকল্প দেশের গ্রামগুলিতে ঐতিহাসিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ ভারতে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার সুবিধা হবে এবং দেশ আত্মনির্ভরতার দিকে আরও একধাপ এগোবে।
শ্রী মোদী বলেছেন, হরিয়ানা, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উত্তরাখন্ড এবং উত্তরপ্রদেশের ১ লক্ষ সুবিধাভোগীর হাতে আজ তাদের বাড়ি সংক্রান্ত আইনি নথি তুলে দেওয়া হল। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশের প্রত্যেক গ্রামে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে প্রত্যেক বাড়ির মালিককে এই ধরণের সম্পত্তি সংক্রান্ত কার্ড তুলে দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী জয়প্রকাশ নারায়ণ ও নানা জি দেশমুখ- এই দুই মহান নেতার জন্মদিনে সম্পত্তি সংক্রান্ত কার্ড বন্টন করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের জন্মদিন একইদিনে শুধু নয়, তাঁদের সংগ্রাম ও আদর্শও একই ধারার। নানাজি এবং জে পি౼ গ্রামীণ ভারত ও দরিদ্রদের ক্ষমতায়ণের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
নানাজির বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করে শ্রী মোদী বলেছেন, ‘যখন গ্রামের জনসাধারণ বিবাদের ঘেরাটোপে পড়ে যান তখন তারা নিজেরাও উন্নতি করতে পারেন না, সমাজেরও উন্নতি হয়না’। শ্রী মোদী আরও বলেছেন, আমাদের গ্রামগুলির বিভিন্ন বিবাদ মেটানোর জন্য মালিকানা প্রাপ্তি একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে ।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের উন্নয়নে জমি ও বাড়ির মালিকানা বড় ভূমিকা পালন করে। তিনি আরও বলেন, যখন মানুষের কাছে সম্পত্তি সংক্রান্ত রেকর্ড থাকে তখন নাগরিকরা আস্থা অর্জন করেন এবং বিনিয়োগের নতুন পথ তৈরি হয়। সম্পত্তি সংক্রান্ত রেকর্ড থাকলে ব্যাঙ্ক থেকে সহজে ঋণ পাওয়া যায়। এর ফলে কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভরতার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু সমস্যা হল যে বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র এক তৃতীয়াংশের কাছে তাদের সম্পত্তি সংক্রান্ত বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্পত্তি সংক্রান্ত কার্ড গ্রামের মানুষদের জন্য কোনো বিবাদ ছাড়াই সম্পত্তি বিক্রি বা কেনার ক্ষেত্রে সুবিধা করে দেবে। তিনি বলেছেন, আজ গ্রামে অনেক যুবক-যুবতী রয়েছেন যাঁরা নিজেরাই কিছু করতে চান। সম্পত্তি সংক্রান্ত কার্ড পাওয়ার পর তারা ব্যাঙ্ক থেকে তাদের বাড়ি দেখিয়ে সহজে ঋণ পেতে পারেন। তিনি বলেছেন, সমীক্ষা এবং মানচিত্র তৈরির কাজে দ্রোণের মতো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রত্যেক গ্রামের জমি সংক্রান্ত রেকর্ড নিঁখুতভাবে তৈরি করা যাবে। নিঁখুত জমির রেকর্ড থাকলে পরে গ্রামাঞ্চলে উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজ করা যাবে। এর ফলে এই কার্ডগুলির অন্যান্য সুবিধাগুলিরও সুযোগ পাওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পঞ্চায়েতী রাজ ব্যবস্থাকে মজবুত করতে স্বামীত্ব প্রকল্প সাহায্য করবে। বিগত ৬ বছর ধরে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ৬ বছর ধরে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তিনি সে সংক্রান্ত উদ্যোগগুলির কথা জানিয়েছেন। পুরসভা ও নগর নিগমের মতো নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বামীত্ব প্রকল্প সাহায্য করবে। গ্রামের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলি দূর করতে বিগত ৬ বছরে নিরলস উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শ্রী মোদী বলেছেন, গত ৬ বছরে গ্রামগুলিতে উন্নয়নের ধারা অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা স্বাধীনতার পর গত ৭ দশকে আসেনি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ দেওয়া, পাকা বাড়ির ব্যবস্থা করা, শৌচাগার করে দেওয়া এবং প্রত্যেক বাড়িতে পাইপের মাধ্যমে পানীয় জলের ব্যবস্থা করার মতো বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের প্রত্যেক গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত গতিতে গড়ে তোলা হচ্ছে।
আমাদের কৃষকদের আত্মনির্ভর করে তোলার বিষয়ে যাদের আপত্তি রয়েছে তাদেরই কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে অসুবিধা হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। এভাবেই তিনি বিরোধীদের সমালোচনা করেছেন। ক্ষুদ্র চাষি, দুগ্ধ ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবিদের কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়ায়, দালাল এবং মধ্যসত্ত্বভোগীরা সমস্যায় পরেছেন ౼ কারণ তাদের বেআইনী রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি নিমের আস্তরণ যুক্ত ইউরিয়া বন্টনের ক্ষেত্রে অসংগতি দূর করতে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোর মতো উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। এরফলে যারা যারা সরকারি টাকার থেকে ভাগ বসাতেন তারাই বর্তমানে কৃষি সংস্কারের বিরোধীতা করছেন। দেশের উন্নয়ন কেউ বন্ধ করতে পারবেন না এবং গ্রাম ও দরিদ্র জনসাধারণ আত্মনির্ভর হয়ে উঠবেন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই লক্ষ্য পূরণের জন্য স্বামীত্ব প্রকল্প অত্যন্ত জরুরি।